দখিনের খবর ডেস্ক ॥ বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার ইলুহার ইউনিয়নের পশ্চিম মলুহার গ্রামে বসবাস শাহাদাত মেনন ও শিরিন বেগম দম্পতির। তাদের উপার্জনের একমাত্র পথ ‘পাটখড়ি’ বিক্রি। যা দিয়ে প্রায় দুই দশক ধরে চলছে তাদের সংসার।
পরিবারের অন্য সদস্যরা শাহাদাত মেনন ও শিরিন দম্পতিকে পাটখড়ি সংগ্রহ থেকে শুরু করে সংরক্ষণ ও বিক্রির কাজে সহায়তা করে থাকে। মহামারি করোনাকালে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাজার দরে কিছুটা হেরফের ঘটলেও বেচাবিক্রিতে তেমন কোন প্রভাব পরেনি বলে জানিয়েছেন তারা। বর্তমান বাজারে ১ কাহন পাটখড়ি আকার অনুযায়ী ৩০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি করা হয়ে থাকে বলে জানিয়ে ব্যবসায়ী শাহাদাত মেনন বলেন, মূলত পানের বরজ তৈরিতে পাটখড়ি ব্যবহার করা হয়। এরপর ব্যবহার হয় ফুলের ঝাড়ু তৈরি ও জ্বালানি হিসেবে। তবে বরিশাল অঞ্চলে পানের আবাদ দিন দিন বাড়তে থাকায় পাটখড়ির চাহিদাও বেড়েছে।
তিনি বলেন, এসব পাটখড়ি মূলত গোপালগঞ্জ সদর, কাশিয়ানী, মোকসেদপুর এবং নড়াইলের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করে থাকি। এরপর এগুলো বাড়িতে নিয়ে এসে আকার অনুযায়ী আলাদা করে শুকানো হয়। তারপর নতুন করে আটি বেধে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হয়। তারপর হাটের সময় এগুলো বিক্রি করি। যার বেশিরভাগ ক্রেতারাই স্থানীয় পানের বরজ যেমন- বরিশালের বাবুগঞ্জ, আগৈলঝাড়া, উজিরপুরের গুঠিয়া, নারায়নপুর, ঝালকাঠি সদর ও নলছিটি উপজেলার চাষিরা। ১২ মাসই এ ব্যবসা করেন জানিয়ে শাহাদাত আরও বলেন, মৌসুমের সময়টাতে প্রচুর পরিমাণে পাটখড়ি কিনে আনি। এরপর তা গ-া, পোন আর কাহন হিসেব সংরক্ষণ করে সারাবছর ধরেই বিক্রি করে থাকি। স্থানীয়ভাবে ৪ পিসে ১ গ-া, আর ২০ গ-ায় এক পোন, আর ১৬ পোনে ১ কাহন এ হিসেবেই পাটখড়িগুলোর হিসেব রাখা হয়। তবে কেনার সময় আটি হিসেবে করে কিনতে হয়, সেখানে ৬০ পিসও থাকতে পারে আবার ৮০ পিসও থাকে। শাহাদাত মেননের স্ত্রী শিরিন বেগম বলেন, ২০ বছর আগে তার স্বামী অত্র এলাকায় একাই এ ব্যবসা শুরু করেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে নদীপথে পাটখড়ি কিনে আনার পর পরিবারের সবাই মিলে সেগুলো বাছাই করে আকার অনুযায়ী শুকানো ও আটিবাধার কাজ করি। সাংসারিক কাজের বাহিরে এ কাজে তেমন বেগ পেতে হয় না বলেও জানান তিনি। শিরিন বেগম বলেন, খড়ির বাজার ভালো থাকায় নতুন করে আরও দুইজন এ ব্যবসা শুরু করছে। তবে তাদের ব্যবসার কারনে আমাদের আর্থিক কোন ক্ষতি হয়নি । কারণ বর্তমানে এখানে পাটখড়ির অনেক চাহিদা বাড়ছে। স্থানীয় বাসিন্দা আবুল মল্লিক জানান, পরিবারের সবাই মিলে এ খড়ির ব্যবসা শাহাদাতকে গুছিয়ে দেন। কারন এ ব্যবসা করেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ ভালো আছেন শাহাদত মেনন। দিন দিন আর্থিক উন্নতিও হচ্ছে তার। অত্র অঞ্চলে তাদের ব্যবসা যেমন বড় হয়েছে, তেমনি তাদের দেখে অনেকেই এ ব্যবসায় আগ্রহীও হয়েছেন। এছাড়া যারা নতুন করে এ ব্যবসায় ঝুঁকেছেন তারাও কখনো লোকসানের কথা বলেননি।
Leave a Reply